সীমান্ত হয়ে মেঘনার পাড়
সীমান্ত হয়ে মেঘনার পাড়
ব্যস্ততায় ঘেরা এই নগর জীবনকে দূরে ঠেলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শহর থেকে দূরে কিন্তু কাছে কোথাও ঘুরে আসব। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।ঘুরে আসার জন্য সবাই ইন্টারনেটে যাথাযথ স্থান খোঁজা শুরু করলাম। এভাবে কিছুক্ষণ কয়েকটা স্থান দেখার পর ভৈরব বাজার মেঘনার পাড় এবং মেঘনা সেতু চুড়ান্ত হল।
আমাদের ভ্রমণটা মূলত ঢাকা থেকে আখাউড়া রেল স্টেশন হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর। এরপর আখাউড়া রেল স্টেশন থেকে ভৈরব বাজার রেল স্টেশন হয়ে মেঘনার পাড়। পুরো ভ্রমণা টা আমাদের ট্রেনে হয়েছিল।
ভ্রমনের ঠিক আগের দিন আমরা ঠিক করেছিলাম সকাল ৭.৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া মহানগর প্রভাতি ট্রেনে করে যাত্রা শুরু করব। যেহেতু আমাদের আগে থেকে টিকিট কাটা ছিল না তাই দাঁড়িয়ে যেতে হবে। অবশেষে ভ্রমণের দিন এসে গেল। আমরা চার বন্ধু মিরপুর থেকে কমলাপুরের উদ্দেশ্যে সকাল ৬.৩০টায় রওনা দিলাম। আমাদের সাথে আরো দুই জন ছিল যাদের একজন ধানমন্ডি থেকে আর অপরজন মুগদা থেকে রওনা দিয়েছিল। আমরা সকলেই ঠিক সময় স্টেশনে এসে পৌঁছাই এবং দাঁড়ানো টিকিট সংগ্রহ করে ট্রেনে উঠি। ট্রেন তার ঠিক সময়ে ছুটতে শুরু করল।
ট্রেন ছুটছিল তার আপন গতিতে আর আমরা সবাই ট্রেনের জানালা দিয়ে গ্রাম বাংলার অপরূপ দৃশ্যগুলো অবলোকন করছিলাম। আহ! কি অপরূপ বাংলার সৌন্দর্য। জীবনান্দ দাস তো এমনি এমনি বলেননি “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়”।
শুরু তে আখাউড়া স্টেশন সম্পর্কে কিছু কথা বলে নিই- আখাউড়া রেল স্টেশন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে স্টেশন। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেল পথ স্থাপন করা হয়। এসময় কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের স্টেশন হিসেবে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইন তৈরি হলে আখাউড়া জংশন স্টেশনে পরিণত হয়।
আখাউড়া স্থল বন্দর গিয়ে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম। স্থল বন্দরের আশপাশ টা ঘুরে দেখলাম। আমরা চলে গিয়েছিলাম ভারত সীমান্তের একদম কাছে। সীমান্তের কাছে গিয়ে একটা বিষয় অবলোকন করলাম সীমান্তের গেইটে ঠিক মাঝ বরাবর একটা দাগ যা দুই দেশকে পৃথক করেছে। এই একটা দাগ যা বিশাল এক ভূখন্ডকে আলাদা করেছে। চাইলে আপনি দাগের ওপার গিয়ে ওই ভূখন্ডে প্রবেশ করতে পারবেন না। এর জন্য আপনাকে কত গুলো আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করতে হবে।
আখাউড়া স্থল বন্দর থেকে আমরা আবার ফিরে এলাম আখাউড়া বাইপাস এবং ওখান থেকে আবার এলাম আখাউড়া রেল স্টেশন। এবার আমাদের গন্তব্য ভৈরব বাজার মেঘনার পাড়। এর মধ্যে সবাই স্টেশনের কাছে একটা হোটেল থেকে দুপুরে খাবারটা সেরে ফেললাম। এরপর স্টেশনে ফিরে ট্রেনের খবর নিলাম স্টেশন মাষ্টার থেকে। আমদের গন্তব্যের ট্রেন আসতে লাগবে আরো ১ ঘন্টা। এই সময়টা আমারা স্টেশনের বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নিলাম।
দুপুর ৩.০০ টায় কর্ণফুলী এক্সপ্রেস আসল যা আখাউড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। আমরা কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠলাম এবং ভৈরব বাজার রেল স্টেশনে এসে নামলাম। ভৈরব স্টেশনে যাওয়ার সময় আমরা পার করেছিলাম ভৈরব রেল সেতু।
আগেই বলেছিলাম আমরা ভৈরব স্টেশনে আসার সময় আমরা ভৈরব রেল সেতু পার করে এসেছি। এই সেতু সম্পর্কে কিছু ইতিহাস জেনে নিই: এটি বাংলাদেশের প্রাচীন সেতু গুলোর মধ্যে একটি। মূলত এই সেতুটির নাম ‘King George the Sixth Bridge বা রাজা ৬ষ্ট জর্জ সেতু’ কিন্তু ভৈরব রেল সেতু নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৩৫ সালে এর নির্মান কাজ শুরু হয়ে ১৯৩৭ সালে নির্মান কাজ শেষ হয় এবং ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই সেতুর উপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হয়। এই সেতুকে কেন্দ্র করেই পরবর্তিতে ভৈরব জংশন রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হয়। এই সেতুটির পাশেই রয়েছে ২য় ভৈরব রেল সেতু। যার নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর এবং ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সরকারি ভাবে এর নাম হল জিল্লুর রহমান সেতু।
সেতু সম্পর্কে অনেক কথা বলা হল, পুণরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসি। রেল লাইন ধরে চলে গেলাম সেতুর কাছে এরপর মেঘনার পাড়। পাড়ে যাতে দেখলাম মেঘনার কি বিশালত্ব। পাড়ে ছিল ছোট বড় অনেক ট্রলার, জাহাজ যা দ্বরা পণ্য আনা নেয়া করা হচ্ছিল। আমারা কিছুক্ষন সেখানে অবস্থান করালাম। মুঠোফোনে কিছু স্থিরচিত্র তুললাম স্মৃতির পাতায় গেঁথে রাখার জন্য।
মেঘনার পাড় থেকে ফিরে আসলাম স্টেশন এবং ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রাত ৭.৪৭ মিনিটের মহানগর গৌধূলি ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করলাম। যথাপি ট্রেন আসল এবং আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। ঢাকা স্টেশনে ফিরে আসলাম রাত ১০টায়।







কোন মন্তব্য নেই