তৃষ্ণা

 


তৃষ্ণা


মায়ার কি কোনো ব্যাখ্যা আপনারা কেউ দিতে পারবেন?

মায়া নাকি অনুভব করতে হয়কিন্তু শান্ত দিঘির তীরে শুয়ে থাকা এই তরুণী পানিতে নিজের চুল এলিয়ে দিয়ে যে জাগতিক হাহাকারের জন্ম আমার মধ্যে দিচ্ছে তা তো আমি আমার অনুভূতির সীমার মধ্যেও ধরে রাখতে পারছি না

তার চুল আপন সংস্রব নিয়ে পানিতে নিজের দৃপ্তির বিস্তার করেছেদিঘির পানি এমনিতে সুপেয় হয়;এখন কি এই পানি আরো বেশি মিষ্টি?

আমি  আকাশের দিকে তাকালামটিমটিমে আলো নিয়ে জ্বলতে থাকা চাঁদের যৎসামান্য জ্যোৎস্না ছাড়াই আপন ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত এই সত্ত্বাকে ছুঁয়ে দেখার দুঃসাহস করা আমার মতো এই ছা-পোষার জন্য ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না!কায়স্তের নাকি বড় স্বপ্ন দেখতে নেই কিন্তু চারপাশ তো তরুণীর কব্জিতে জড়ানো বেলী ফুলের সু-ঘ্রাণে - করছে;স্বপ্নে কিন্তু গন্ধ পাওয়া যায় না

আমি পা টিপে টিপে এগিয়ে তরুণীর পাশে বসলামএকজন মানুষ প্রকৃতির সমস্ত লাবণ্য একাই দখল করে বসে আছে; ঘোর অন্যায়...

ফিনফিনে নীলাভ শাড়িতে জড়ানো এই ঘুমন্ত মৎস্যকণ্যার প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে তার বুকের ওঠা-নামা আমাকে আরও বেশি হত বিহ্বল করছে,সারা জীবন ভালবাসার তৃষ্ণায় কাতর এই আমি কি করে দেবী হেরার রূপ হৃত এই শ্যামলীকে জয় করে ফেললাম!

মেয়েটির বন্ধ চোখ জুড়ে যে প্রশান্তি খেলে যাচ্ছে তার সামান্য অংশে ভাগ কি আমি চাইতে পারি না;অবশ্যই পারি ভিক্ষা চাইবার অধিকার তো ভিক্ষুকেরই আছে

মেয়েটির গালে সাহস করে স্পর্শ করলামমখমলী রূপা বলে কিছু আছে কিনা আমি জানি না;তবে গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতো ওষ্ঠের ধারণ করে রূপালী আভা ছড়ানো চিবুক জোড়া নিশ্চয়ই মখমলের চেয়েও বেশি মোলায়েম হয়েছে

তার নিঃশ্বাসের প্রতিটি কণা যখন আমার ঠোঁট অনুভব করছে;ঠিক সেই মুহূর্তে তরুণী তার গভীর দৃষ্টি মেলে ধরলোপৃথিবীর সেরা সাঁতারুর পক্ষেও গভীরতায় ভেসে থাকা সম্ভব না

সেই দৃষ্টি থেকে নিজেকে রেহাই দেওয়ার ক্ষমতা আমার কখনই ছিলো না;এখনও নেইএই দৃষ্টির গভীর থেকে ধেয়ে আসা সন্দেহপূর্ণ চাহনীকে যেমন আমি ভালবেসেছি; এই অদ্ভুত স্রোতে বয়ে চলা রাতে সেই দৃষ্টিরই মায়াময় চাহনিতে আমার দু'চোখ যেন চিরতরের আটকা পড়ে গিয়েছে

কেমন যেন অবসাদ লাগছে...তরুণীর নজরবন্দি হয়েই তার ঠিক পাশে নিজেকে এলিয়ে দিতে বাধ্য হলাম,কিন্তু আমার দু'চোখ তার চোখ থেকে এক মুহুর্তের জন্যও সরতে পারেনি

তার শরীরের ঘ্রাণে সমগ্র জগৎ টাই ঘোরের মতো লাগছেকি আশ্চর্য...আমার দেহের সমস্ত শক্তিই কি সে তার দৃষ্টি দিয়েই শুষে নিলো নাকি!

চোখে চোখ রেখে সে দৃষ্টিতে কেমন যেন দুষ্টুমির ঝিলিক আনছেকি চায় সে!

তরুণী উবু হয়ে খানিক উঠে বসলোঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে আমার ঠোঁটে হাত রেখে ঝুঁকে  এসে কানের কাছে কিছু ফিসফিস করলো,"ভালবাসি"

আমি ভুল শুনে থাকতে পারি;তবুও আমি এই ভুল জীবনে বারবার শুনতে চাইবো

আমি তরুণীকে স্পর্শ করবো;কিন্তু মায়াকে কি ধরা ছোঁয়া যায়?তার ভেজা চুলের ঝংকার...

 

"হারামজাদা,এইখানে ঘুমাস কেন?"

অপ্সরীর এত কর্কশ কণ্ঠস্বর কেন তা যদিও আধা সেকেন্ডের জন্য বুঝতে পারছিলাম না;কিন্তু পরমুহূর্তেই পানির বোতল হাতে বান্ধবী অথৈ পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠলো

অথৈ এর পাশে ভ্রু কুঁচকে ব্যাকপ্যাক কাঁধে দাঁড়ানো রওনক

ওপরে কড়া রোদঝাঝা গরমের মধ্যেই দুর্দান্ত একটা ঘুম দিয়ে ফেলেছিক্রিসেন্ট লেকের এই জায়গায় প্রায়ই আমি শুয়ে বসে থাকিআজকেও বসে থাকতে থাকতে তন্দ্রা চলে এসেছিলো বোধ হয়

"গরীবের হিমু", রওনক দাঁত বের করে বললো," হলুদ পাঞ্জাবীটা নাই শুধু"

আমি খুব কড়া একটা জবাব দেওয়ার জন্য মুখ খুলছিলামএমন সময় অথৈ বললো,

"আজাইরা প্যাচাল পারবি না এখন;ঢাকার অর্ধেক খুঁজে ফেলছি তোকে,লাস্ট মোমেন্টে মনে পড়লো;আপনি এইখানে বসে ধ্যান করেন"

আমি তখনও খানিক ঝিমুনি অনুভব করছিলাম;ডান হাতের তালুর উল্টো পাশ দিয়ে মুখ ঢেকে হাই তুলতে তুলতে বললাম,"ক্ষুধা লেগেছে;কিছু খাওয়া"

"রাত ভরে করিস কি," অথৈ চোখ সরু করে বললো,"বাইরে এসে ঘুমাস!"

রওনক আমার পাশে এসে বসতে বসতে বললো,"বুঝিস না;মেগাবাইটের দাম কমে গিয়েছেরাতে কি আর ঘুম হয়!!"

আমি রওনকের দিকে কটমট করে তাকালামসে তার ছোট ছোট দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করছেখুবই নিম্ন শ্রেণির কৌতুক যদিও কিন্তু অথৈকে দেখে মনে হলো রওনকের করা অনুমানে সে- খুবই উচ্চ শ্রেণির আনন্দ পেয়েছে

"যাই হোক,"অথৈ হাসি চেপে বললো," তোকে আম্মু ধরে নিয়ে যেতে বলেছে"

 "কেন,আমি কি করেছি?"

"অনেকদিন যাস না,ফোন-মেসেজের রিপ্লাইও ঠিক মতো দিস নাআজকে আমাদের সাথে খাবি দুপুরে"

প্রস্তাব খারাপ নাহোস্টেলের ব্রয়লার খেতে খেতে পাকস্থলীর প্রাচীরে মনে হয় এর মধ্যে পুরু আস্তরন পড়ে গিয়েছে

আমি উঠলাম;হঠাৎ অথৈ বললো,"তোর মাস্ক কোথায়?"

আসলেও;আমি মাস্ক পরেই সব জায়গায় ঘোরাঘুরি করিঅন্তত ঘুমানোর আগে মাস্ক পড়েই শুয়েছিলাম তা স্পষ্ট মনে আছে

কয়েক মুহূর্ত ভেবে বললাম,"মনে হয় ঘুমের মধ্যে কেউ খুলে নিয়ে গিয়েছে"

অথৈ আর রওনক দু'জনই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেআমি একটু মুচকি হাসার চেষ্টা করে বললাম,"ঘুমটা খুব গভীর হয়েছে"

অথৈ সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললোতারপর ব্যাগ খুলে আরেকটা সার্জিকাল মাস্ক বের করে এগিয়ে দিয়ে বললো,"এটা পরে গাড়িতে ওঠ"

অথৈ এবং রওনক সম্পর্কে কি কিছু বলবো?

নাহ;আর একটু পরে বলিবাইরে যে কি ভয়াবহ গরমের মধ্যে ছিলাম তা গাড়ীতে এখন এসির এই ঠান্ডায় বসে টের পাচ্ছিএকটু শীতল হয়ে না হয় ওদের দু'জনের সম্পর্কে চেড়া যাবে

গাড়ী প্রায় ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছেযদিও রাস্তায় মানুষের চালচলনে মহামারী শহরে আর আছে বলে মনে হচ্ছে নাঅথচ প্রতিদিনই বড় সংখ্যার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেই

আমাদের মাঝখানে বসা রওনক বললো,"আজকে কয়টায় রওনা হবি?"

আমি জিজ্ঞেস করলাম,"কোথায়?"

অথৈ বললো,"তৃষ্ণার এনগেজমেন্টে"

আজকে তৃষ্ণার আংটি বদল তা সম্ভবত আমি ভুলে গিয়েছিলামকিংবা ইচ্ছে করেই মনে রাখতে চাই নিঠিক জানি না;কি কারণে যেন এই বিয়ে সংক্রান্ত কোনো কিছুর মধ্যেই  আমি যেতে চাচ্ছি না

জানালার বাইরে তাকিয়ে আছিপিচ ঢালা রাস্তা রোদে চকচক করছেগত চারদিন তানিয়াকে পড়াতে যাই নিএর পেছনে একটা ঘটনা আছে অবশ্য

সেদিন পড়ানো শেষে বাসা থেকে আসার সময় তানিয়া নিচ পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিতে এসেছিলো ধরনের কাজ কখনও সে করে নাযেহেতু তানিয়া কখন কি করে বা বলে তার বেশিরভাগেরই কোনো মানে নেই;তাই আমি তেমন পাত্তা দেই নি

গ্যারেজে দাঁড়িয়ে তানিয়া খানিক ইতস্তত করতে লাগলসেদিনের অস্থিরতা ওর স্বাভাবিক অস্থিরতার মতো না

আমি ওর দিকে তাকালাম;ওর শিক্ষক বা বড় ভাই হিসেবে আমার মনে হলো একটু জিজ্ঞেস করা উচিত মন খারাপ কিনা

"কিছু বলবে?"আমি জিজ্ঞেস করলাম

তানিয়া আমার চোখের দিকে তাকালো না, বরং আরেকটু অস্থিরতা বোধ হয় ওর বিশাল ফ্রেমের চশমার পেছন থেকে প্রতিসৃত হলো

সন্দেহ দানা পাকাতে সময় লাগে নাএতক্ষণ সাধারণ কৌতূহল থাকলেও এবার আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম,তানিয়া খুব কঠিন কিছু আমাকে বলতে চায়

আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম," বলে ফেলো;কথা পেটে রাখলে বদহজম হয়"

তানিয়া এবার বললো,"স্যার;আপু বিয়েটা নিয়ে হ্যাপি না"

আমি বিস্মিত হলামআগেরদিন সিঁড়িতে যখন তৃষ্ণার সাথে কথা হয়েছিলো;তখন তো গায়ে হলুদের জন্য কদমের খোঁজ করলো

তানিয়া বললো," আমি ঠিক জানি না আমার এটা বলা উচিৎ কিনামনে হয় নাকিন্তু না বললে মনে হয় অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে"

আমি বললাম,"কি?"

তানিয়া ঢোক গিললো;চোখ ভীতি আর সংশয়ে ছলছল করছে,"আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে"

তানিয়া যা বললো তা কতোটা নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে সংশয় থাকা অস্বাভাবিক নাওর কাজই হলো নানান আজগুবি কথা বলে শ্রোতাকে ভড়কে দেয়াতবে এই মুহূর্তে ধরনের কথায় কি পরিমাণ ভয়ংকর প্রভাব এই পরিবারের সার্বিক অবস্থার ওপর পড়তে পারে সেটুকু বোঝার ক্ষমতাও যে ওর মধ্যে নেই তা আমার জানা ছিলো না

আমি শীতল কণ্ঠে বললাম,"তুমি কি জানো তুমি কি ভয়ংকর একটা কথা বলছো?"

"আমি জানি;আপনি আমাকে যতেটা হাবাগোবা ভাবেন আমি মোটেও তেমন না;আপু নিজেই আমাকে একবার বলেছে"

আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমার কি বলা উচিৎ ছিলো

"আপনি কিছু একটা করুনএখনও সময় আছে"

আমি নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম,"কি করবো?"

"আমি ঠিক জানি না;তবে কিছু একটা করুনআপনিও তো আপুকে ভালোবাসেন;বাসেন না?"

আমি এক মুহূর্ত ভেবে চোয়াল শক্ত করে বললাম,"না"

 

"তৃষ্ণার হবু বরকে দেখেছিস?"অথৈ জিজ্ঞেস করলো"

দুপুরের খাবার খেয়ে অথৈ এর বাসার ড্রয়িং রুমে তিন জন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলামবাসায় আসার আগে পথে গাড়ি ঘুরিয়ে অবশ্য দু'জন মিলে আমাকে মার্কেটে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো একটা পাঞ্জাবি কিনতে; পাঞ্জাবি নেই বলে এনগেজমেন্টে যাবো না বলায় এই তড়িৎ ব্যবস্থা

রওনক বললো,"ঐটা আমাদের ফ্রেন্ডের বর,উনাকে তো ছেড়ে দে"

অথৈ কাঁচকলা মার্কা একটা হাসি দিলো,বললো,"কি করবো,হি ইজ হট!"

অথৈ বিশ্ববিদ্যালয়ের বানিজ্য অনুষদের একটা খটমটে নামের বিভাগে পড়েপড়ুয়া মেয়েদের চোখে চশমা থাকা অবধারিত;অথৈ এর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নিকবিতা আবৃত্তিকার হিসেবে সে দেশে মোটামুটি বিখ্যাতই বলা যায় কারণে ওর কথাবার্তাও কবিতা আবৃত্তির মতো ঠেকে অনেক সময় তৃষ্ণার সাথে একই সংগঠনে কবিতা আবৃত্তি করায় ওদের মধ্যে খুবই ভালো বন্ধুত্বতানিয়ার টিউশনি ওর মাধ্যমেই আমি পেয়েছিলামএছাড়াও একমাত্র  অথৈ এর পরিবার আমাকে এই নিঃস্ব শহরে কিছুটা হলেও একাকীত্ব থেকে মুক্তি দেয়

রওনক ওর ক্যামেরা ঠিকঠাক করছেপ্রায়ই দেখা যায় ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে উদাসভাবে সে রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছেহঠাৎ এমন এমন জিনিসের ছবি সে তুলে ফেলে,আমার আপনার সাধারণ চোখ বিশ্বাসই করতে চাইবে না সেটার মধ্যে ছবি তোলার মতো কিছু আছেগত বছর টিএসসির একটা ফটোগ্রাফি কনটেস্ট থেকে প্রথম পুরষ্কার নিয়ে এসেছে একটা শ্যাওলা ভাসা পুকুরের ছবি তুলে!

"আজকে অনেক বেশি কামলা দেওয়া লাগবে," ক্যামেরা চোখে ধরে পরখ করতে করতে রওনক বললো,"চার্জারটা নিয়ে নেবো?"

অথৈ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,"তোর কি মনে হয় না,তৃষ্ণা বিয়েটা নিয়ে কেমন যেন উদাস উদাস?"

"জানি না," আমি চোখ নিচে নামিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে বললাম,"তোর ক্যাম্পাসের বান্ধবী তুই জানিস"

অথৈ বললো,"আমিও কিছু জানি না,বলে না কিছুকেমন যেন মরা মরা কিন্তু এমন না তবে শুনেছি ছেলেটা আগে বিয়ে হয়েছিলো"

আমি ধাক্কার মতো খেলামতৃষ্ণার মতো একটা চমৎকার মেয়ের কিনা আগে বিবাহিত একটা ছেলের সাথ বিয়ে হবে!

অথৈ বললো,"ধাক্কা লাগলো?"

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম,রওনক বললো,"কি আর করার আংকেল আন্টি ওকে বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছেযদিও সোহেল ভাই কিন্তু বেশ ভালো মানুষ"

"তো তোর সোহেল ভাই এর আগের বউ এত ভালো মানুষকে রেখে দৌড় দিলো কেন," অথৈ ঝামটা মেরে জিজ্ঞেস করলো

রওনক বললো,"ঝামেলা হতেই পারে"

অথৈ বললো,"যাই হোক;কালকে গায়ে হলুদ,আজকে আমি ওদের বাসায় থাকবো"

রফিক সাহেব বেশ 'বার আমাকে ফোন করেছিলেনরিসিভ করি নিএরপর গায়ে হলুদে থাকতে বলে মেসেজও করেছিলেন

আমি কিছুক্ষণ ভাবলামতারপর বললাম,"আচ্ছা এখন কদম ফুল পাওয়া যাবে কোথায়?"

"দশ নম্বরে উঠেছে কিছু কিছু," রওনক বললো,"কেন?"

আমি বললাম,"কেনা লাগবে"

অথৈ জিজ্ঞেস করলো,"তুই হচ্ছিস ব্যাটা শুকনা খেজুর;তুই কদম ফুল দিয়ে হঠাৎ কি করবি;খাবি নাকি?"

"না," আমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম,"একজন চেয়েছে"

"কে চেয়েছে?"অথৈ চোখ কপালে তুলে বললো,"এখনই যাচ্ছিস কেন?"

"নইলে দেরি হয়ে যেতে পারে"

"মানে,শালা দৌড় দেয়ার ধান্দা নাকি?" রওনক বললো

অথৈ আমার পিছে পিছে এলো দরজার কাছেদরজা খুলে দেওয়ার আগে অথৈ সন্দেহের কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,"তৃষ্ণা কি তোর কাছে কদম ফুল চেয়েছে?"

আমি জুতো পরছিলাম,উত্তর দিলাম না

"সত্যিই চেয়েছে,দিব্যি?"

 অথৈ তীব্র বুদ্ধিমত্ত্বার একজন মানুষসে যেহেতু আঁচ করে ফেলেছে আর কথা চেপে রাখা অর্থহীন ভেবে আমি বললাম,"হু"

অথৈ এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললো,"ওর কাছে কদম ফুল খুব বেশি আবেগের ব্যাপার,সবার কাছে এটা চায় নাআমরা যারা ওর সাথে ছোটবেলা থেকে আছি তারা জানি

তুই যদি সত্যিই বলে থাকিস,তাহলে আসলে ব্যাপারটা জটিল!"

 আমি লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে আছি;সাত তলায় বাসা,চার তলায় লিফট কেউ ধরে রেখেছে

"তুই বুঝতে পারছিস তো আমি কি বলছি?" অথৈ বললো

লিফট চলে আসছে,আমি অথৈ এর দিকে তাকালাম না

হঠাৎ সে বললো,"তুই সবই বুঝতে পেরেছিস,ভেবেছিস এবং জন্যই তুই চারদিন গায়েব ছিলি তাই না?"

লিফট পাঁচ তলায় চলে এসেছেকোনো কারণ ছাড়াই লিফট পৌঁছানোর আগে আমার কেমন যেন অস্থির লাগে

"শোন তৃষ্ণাকে যেমন আমি বুঝতে পারি তোকেও আমি চিনি";অথৈ বলে চলেছে," কারও তুচ্ছ আব্দার রাখতে হুট করে বেরিয়ে পড়ার মানুষ তুই নাতুইও কি তৃষ্ণাকে ফিল করিস?"

লিফটের দরজা যান্ত্রিক একটা শব্দ করে খুলে গেল;আমি অথৈ এর দিক তাকিয়ে বললাম,"হু.. করি"

লিফটে ঢোকার আগে ওর বিস্মিত চেহারা দেখে একটু অদ্ভুত লাগলেও ভেতরে কেমন যেন স্বস্তিও লাগছিলো,অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার স্বস্তি

(চলবে...)

কোন মন্তব্য নেই

শ্রী-শোভা এবং আমরা ক'জন

শ্রী-শোভা এবং আমরা ক'জন চায়ের দেশে স্বাগতম ভাস্কর্য মধ্যযুগে মরক্কোর প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছিলেন -                          ...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.