নোকিয়াঃটেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির এক হারানো সাম্রাজ্য

 নোকিয়াঃটেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির এক হারানো সাম্রাজ্য


 

আমাদের অধিকাংশেরই মোবাইল ফোন নামক প্রযুক্তিটির সাথে পরিচয় নোকিয়া ব্র্যান্ডটির মাধ্যমে।নব্বই কিংবা দু'হাজার সময়কালের মানুষ গুলোর  তো নোকিয়ার মজবুত কাঠামোর গল্প এখনও মুখে মুখে ফেরে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির যে জয়জয়কারের সাক্ষী আমরা বর্তমান যুগে হচ্ছি;এর সূচনা লগ্নে অবিস্মরণীয় অবদান রাখা এই ফিনল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি অল্প কয়েক বছরেই প্রযুক্তি ভিত্তিক বানিজ্যের খাতে যে সাফল্যের ছাপ ফেলে গিয়েছে;তা আজও বহু টেক কোম্পানির কাছে রীতিমতো ঈর্ষণীয়। মোবাইল ফোন বিক্রয়ের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত নোকিয়া ১১০০ মডেলটির জনক নোকিয়া কোম্পানি কেন এই প্রযুক্তি বানিজ্যের স্বর্ণযুগে প্রায় হারিয়েই গেল!

নোকিয়া ১১০০

প্রায় দেড়শ বছর আগে ফিনল্যান্ডের নোকিয়া শহরে 'নোকিয়া করপোরেশন' কোম্পানিটির জন্ম হয়।তবে সেই সময় তারা মূলত কাগজ কল হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তী প্রায় একশ বছর এই ব্যবসা সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রমান্বয়ে বদলে যাওয়া বানিজ্য জগতের সাথে তাল মিলিয়া নোকিয়া কোম্পানিও বিভিন্ন খাতে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করতে আরম্ভ করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে  নিজেদের প্রথম মোবাইল ফোন মডেল বাজারে উন্মুক্ত করে টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় নিজেদের প্রথম পদক্ষেপ ফেলে নোকিয়া। ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যবসা বাড়ানোয় নোকিয়া খুব দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানি হয়ে উঠলেও মুনাফার দেখা পাচ্ছিলো না। তাই মোবাইল ফোন ব্যবসায়ই নিজেদের প্রধান মনোযোগ ব্যয় করতে থাকে তারা। বর্তমানে আমরা জিএসএম প্রযুক্তি ভিত্তিক যে সিমকার্ড ব্যবহার করি,১৯৮০ এর দশকে সিমেন্স এবং নোকিয়ার যৌথ প্রচেষ্টাই পৃথিবীকে প্রথম এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম কলটি করেন তৎকালীন ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারি হোল্কেরি।

ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারি হোল্কেরি (৬ জানুয়ারী, ১৯৩৭ - ৭ আগস্ট, ২০১১)


২০০০ সালে "নোকিয়া ৩৩১০" ছিলো সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকা প্রথম মোবাইল ফোন। একটি ছোট্ট যন্ত্রের মাধ্যমেই এক সাথে যোগাযোগ,ক্যালকুলেটর,ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ ইত্যাদি নানা সুবিধা পাওয়া সে সময়ের হিসেবে ছিল রীতিমতো অভাবনীয়। ২০০৮ সালে নেকিয়ার মার্কেট শেয়ার ছিল ৪৩.৭ শতাংশ। সেই বছরই তারা বিশ্বব্যাপী ৪৬৮ মিলিয়ন ইউনিট মোবাইল বিক্রি করেছিলো।

নোকিয়া ৩৩১০


তবে বিগত দশক থেকেই মূলত নোকিয়ার ভরাডুবি শুরু হয়। নোকিয়া শুধু বার ফোন তৈরিতেই বেশি মনোযোগী হলেও ততোদিনে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি স্মার্টফোনের যুগে প্রবেশ করে ফেলেছে। অ্যাপল কোম্পানিও ক্রমান্বয়ে তাদের আইফোন প্রযুক্তির উন্নততর সফটওয়ার বাজারে আনছিলো। অন্যদিকে নোকিয়া মূলত তাদের হার্ডওয়্যার প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিয়ে পুরোনো অপারেটিং সিস্টেম নিয়েই পড়ে থাকে। যা ক্রেতাদের ক্রমশঃ নোকিয়ার থেকে দূরে ঠেলে দেয়।ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে ২০১১ সালে নোকিয়ার মুনাফা ঋণাত্মক পর্যায়ে নেমে যায়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের কাছে ৭.২ বিলিয়ন ডলারে লুমিয়া ফোনের স্বত্ব বিক্রি করে দেয় নোকিয়া। কিন্তু দু'বছর পরই চরম ব্যবসায়িক ক্ষতির পর এইচএমডি গ্লোবালের কাছে তা বিক্রি করেছিলো মাইক্রোসফট। এক সময় মোবাইল ফোন মার্কেটের প্রায় অর্ধেক দখলে রাখা নোকিয়ার বর্তমান মার্কেট শেয়ার মাত্রশতাংশ।

মাইক্রোসফট লুমিয়া ৫৩৫



সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপরিহার্য। সময়ের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী;এটি যেহেতু আটকানো সম্ভব না,যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকেই উন্নততর করাই তাই বাঞ্চনীয়।বদলে যাওয়া প্রযুক্তির জগতের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হওয়া নোকিয়াও তাই প্রায় হারিয়েই গিয়েছে মোবাইল ফোন বানিজ্যের মার্কেট থেকে।কিন্তু আজও পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত দশটি মোবাইল ফোন মডেলের আটটিই নোকিয়া কোম্পানির। টেলিযোগাযোগ ইতিহাসে তাই চিরকাল নোকিয়া এক অবিচ্ছেদ্য নাম।

 

কিবরিয়া লিমন
৬৬তম ব্যাচ,অর্থনীতি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কোন মন্তব্য নেই

শ্রী-শোভা এবং আমরা ক'জন

শ্রী-শোভা এবং আমরা ক'জন চায়ের দেশে স্বাগতম ভাস্কর্য মধ্যযুগে মরক্কোর প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছিলেন -                          ...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.