বিউটি বোর্ডিং এ একদিন

বিউটি বোর্ডিং এ একদিন


বিউটি বোর্ডিং সম্পর্কে জানার এবং এই বোর্ডিং এর কিছু ভিডিও দেখার পর ইচ্ছে ছিল একদিন বোর্ডিংটাতে ঘুরে আসব। কিন্তু কোনভাবেই সময় বের করতে পারছিলাম না। হঠাৎ একদিন আমার বন্ধু রাহাত তার কিছু কাজের জন্য চকবাজার যাবে। আমকেও তার সাথে যেতে বলল। আমিও আর না করলাম না রাজি হয়ে গেলাম। তখন মাথায় আসল এই ফাঁকে তাহলে বিউটি বোর্ডিং ঘুরে আসা যাক সাথে দুপুরের খাবারটাও সেরে ফেলা যাবে সেখানে। যাত্রাপথে রাহাতকে এই সম্পর্কে বলার পর সেও রাজি হয়ে গেল।

আমরা চকবাজারে কাজ শেষ করার পর রিক্সায় করে বিউটি বোর্ডিং এ যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জনসন রোড হয়ে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ দিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে বাংলাবাজার রোড দিয়ে ঢুকে কাঙ্ক্ষিত বিউটি বোর্ডিং এর সামনে গেলাম।

 

বোর্ডিং এ আসলাম চলুন আগে বোর্ডিং এর কিছুটা ইতিহাস জেনে নিইঃ

বিউটি বোর্ডিং যেখানে এক সময় এই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের আড্ডার এক অন্যন্য স্থান ছিল। শুধু কবি সাহিত্যিক নয় বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি যুগের অনেক তারকা, তখনাকার সময়কার অনেক পত্রিকার সম্পাদক, খ্যাতনামা অনেক সাংবাদিকদেরও আনা গোনা ছিল এই স্থানে।

বিউটি বোর্ডিংয়ের বর্তমান মালিক তারক সাহা। যদিও এই বোর্ডিং এর প্রকৃত মালিক ছিলেন জমিদার সুধীর চন্দ্র দাস। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় জামিদার পরিবারটি ভারতে চলে যায়। তখন এখানে গড়ে ওঠে একটি ছাপাখানা। সে সময় এখান থেকেই প্রকাশিত হত সোনার বাংলা নামের একটি পত্রিকা। কবি শামসুর রহমানের প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয়েছিল এ সোনার বাংলা পত্রিকায় দেশভাগের পর বাংলাবাজার হয়ে ওঠে প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। তখন থেকেই বিউটি বোর্ডিং শিল্পী-সাহিত্যিকদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র হয়ে যায়। একসময় সোনার বাংলা পত্রিকাটির অফিস কলকাতায় চলে গেলে এর মালিক সুধীরচন্দ্র দাসের কাছ থেকে জায়গাটা বুঝে নেন প্রহ্লাদচন্দ্র সাহা ও তার ভাই নলিনীকান্ত সাহা। তারপর সোনার বাংলা প্রেসের জায়গায় শুরু হয় আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা।



 

যাহোক বোর্ডিং সম্পর্কে কিছুটা ইতিহাস জানা হলো এখন আবার আগের যায়গায় ফিরে আসি। রিক্সা থেকে নামার পর বোর্ডিং এর মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করলাম ভিতরে। বোর্ডিংটা মূলত ছিল এক সময় জমিদারবাড়ি তাই স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ শাসনামলের ঢাকার আর দশটা বাড়ির মতই করা হয়েছে। বাড়িটি হল দোতালা এবং ১১কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বাড়িটিতে ঢুকতেই আপনার চোখে পড়বে সারি সারি গাছ এবং ফুলের বাগান যার দৃশ্যটি ছিল অপরূপ।




যেহেতু দুপুরের খাবারের সময় গিয়েছিলাম তাই আগেই বোর্ডিং এর খাবারঘরে ঢুকে পড়লাম। খাবারের ম্যানু বোর্ডে নানা পদের খাবার দেখলাম। এখানে ভাত, ডাল, শাক সব্জি থেকে শুরু করে অনেক প্রকার মাছের রান্নাও পাবেন।




খাবার শেষ করে আমরা দুই বন্ধু মিলে কিছুক্ষন বোর্ডিংটা ঘুরে দেখলাম। দেখলাম ইংরেজ শাসনামলের জমিদারদের তখনকার সময়ের বাড়ির অবকাঠামোগত সৌন্দর্য। কিছুটা সময় পর্যবেক্ষনের পর দুই বন্ধু বিউটি বোর্ডিং থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। 




 

যাবেন যেভাবেঃ

ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে গুলিস্তানে আসতে হবে।  গুলিস্তান থেকে বাসে করে বাহাদুর শাহ পার্ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসে যে কাউকেই জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দিবে বিউটি বোর্ডিং


মোঃ সাকিব ইসলাম
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
আই এস টি টি

কোন মন্তব্য নেই

শ্রী-শোভা এবং আমরা ক'জন

শ্রী-শোভা এবং আমরা ক'জন চায়ের দেশে স্বাগতম ভাস্কর্য মধ্যযুগে মরক্কোর প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছিলেন -                          ...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.